প্রাইমেটদের কালার ভিশনের বিবর্তন (শেষ পর্ব)
ছবি: সুপার কালার ভিশন? কোন কোন নারীর চোখের রেটিনায় তিনটির বদলে চার ধরনের ভিজুয়াল পিগমেন্ট থাকে। এই চতুর্থ পিগমেন্টটি তৈরী হয় কোন একটি X লিঙ্কড দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর আলো শোষনকারী পিগমেন্ট জিনের মিউটেশনের মাধ্যমে। এবং দেখা গেছে এটি রেটিনার বর্নালী শোষনের সংবেদনশীলতাতেও পরিবর্তন আনে। কিন্তু এই পরিবর্তন আরো বেশী রেন্জের রঙ দেখার ক্ষমতা সৃষ্টি করে কিনা তা নিয়ে গবেষনা শেষ হয়নি। এখনও পর্যন্ত কালার ভিশনের কোন পরীক্ষায় টেট্রাক্রোমাটিক ভিশনের কোন প্রমান মেলেনি। আর যদি এ ধরনের কোন ভিশন আদৌ থেকে থাকে, যাদের আছে, তাদের সেই দৃষ্টি ক্ষমতার অস্বাভাবিকতা সম্বন্ধে কোন ধারনা না থাকার সম্ভাবনাই বেশী। সুত্র: GEORGE DIEBOLD Getty Images (eye); Scientific American, April 2009);
ট্রাইক্রোম্যাসি কালার ভিশন উদ্ভবের দুটি পথ:
পরবর্তী গবেষনাগুলোয় প্রাইমেট ট্রাইক্রোম্যাসির বিবর্তনের আসল কাহিনী দেখা গেল আরো বেশ কিছুটা জটিল এবং বিস্ময়কর। এই বিবর্তনের রহস্য সমাধানে খু্বই গুরুত্বপুর্ণ ক্লুটা আসে যখন বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে, আসলে প্রাইমেটদের মধ্যে ট্রাইক্রোম্যাটিক কালার ভিশনের দুটি ভিন্ন প্রক্রিয়া কাজ করে: একটি ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটস ( প্রাইমেটদের যে গ্রুপটা বিবর্তিত হয়েছিল সাব-সাহারান আফ্রিকা এবং এশিয়ায়, যেমন: গিবন, শিম্পান্জ্ঞি,গরিলা এবং মানুষ) এবং অন্যটি নিউ ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের ( মধ্য ও দক্ষিন আমেরিকার প্রজাতিগুলো যেমন, মারমোসেট,টামারিন, স্কুইরেল মান্কি ইত্যাদি) মধ্যে।
ছবি: ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রাইমেট ( যেমন: মানদ্রিল) ; ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রাইমেট: ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটরা অনেক মিলিয়ন বছর ধরে বিবর্তিত হয়েছে আফ্রিকা এবং এশিয়ায়। বর্তমানে এই গ্রুপে আছে গ্রেট এইপরা: মানুষ, ওয়াংউটান, গরিলা, বনোবোস, শিম্পান্জ্ঞি। এছাড়া্ও আছে গিবন,লেঙ্গুর,ম্যাকাক ও মান্ড্রিল। ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের লিনিয়েজ নিউ ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের ( মধ্য ও দক্ষিন অ্যামেরিকা) থেকে আলাদা হয়েছে প্রায় ৪০ মিলিয়ন বছর আগে যখন আফ্রিকা আর দক্ষিন অ্যামেরিকা মহাদেশ ভৌগলিকভাবে সম্পুর্নভাবে পৃথক হয়েছে। ((সুত্র: MAPPING SPECIALISTS (globe); CYRIL RUOSO Minden Pictures (mandrill) Scientific American, April 2009)
ছবি: নিউ ওয়ার্ল্ড মান্কিদের বসবাস মধ্য ও দক্ষিন অ্যামেরিকায়, এরা আকারে তাদের ওল্ড ওয়ার্ল্ড মান্কিদের তুলনায় আকারে ছোট হয়। এদের মধ্যে আছে মারমোসেট, টামারিন,স্কুইরেল মান্কি, স্পাইডার মান্কি, হাওলার মান্কি ও কাপুচিনরা। ((সুত্র: MAPPING SPECIALISTS (globe); PETE OXFORD Minden Pictures (white-bellied spider monkey; Scientific American, April 2009)
মানুষ এবং অন্যান্য ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটরা তাদের এম (M) এবং এল (L) পিগমেন্টের দুটো জিনই তারা তাদের উভয় X ক্রোমোজোমে বহন করে এবং যা তাদের ট্রাইক্রোমাটিক ভিশনের কারন। কিন্ত নিউ ওয়ার্ল্ড মান্কিদের কালার ভিশন নিয়ে গত কয়েক দশকের গবেষনায় ডঃ জ্যাকবস আবিষ্কার করলেন, নিউ ওয়ার্ল্ড মান্কিদের ট্রাইক্রোম্যাসি দেখা যায় শুধুমাত্র তাদের স্ত্রী সদস্যদের একটি গ্রুপের মধ্যে। অর্থাৎ নিউ ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের বাদবাকী সব পুরুষ, এবং প্রায় এক তৃতীয়াংশ স্ত্রী সদস্য যাদের পরীক্ষা করা হয়েছে দেখা গেছে মাঝারী আর দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘের মাঝামাঝি স্পেক্ট্রামের কোন আলো (রঙ) তারা শনাক্ত করেতে পারে না, যা সাধারনতঃ ডাইক্রোম্যাটদের মধ্যেই দেখা যায়। তাহলে প্রাইমেটদের মধ্যেও তাহলে ট্রাইক্রোম্যাসি কালার ভিশন সর্বজনীন না।
এই অদ্ভুত ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করার জন্য গবেষকদের বেশ কয়েকটি টীম নিউ ওয়ার্ল্ড মান্কিদের মধ্যে কোন (Cone) পিগমেন্টের সংখ্যা এবং রেটিনায় তাদের বিন্যাস সজ্জা নিয়ে গবেষনা করেছেন। প্রায় সব প্রজাতির দেখা একটি যায় ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘ সম্পন্ন বা এস (S) পিগমেন্ট আছে (তাদের অবস্থান সম্ভবত নন-সেক্স ক্রোমোজোমে) এবং শুধু মাত্র একটি দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর পিগমেন্টের জিন পাওয়া গেছে, যার অবস্থান এদের X ক্রোমোজোমে (সেক্স ক্রোমোজোম); অন্যভাবে ব্যাপারটি ব্যাখা করলে, নিউ ওয়ার্ল্ড মান্কিদের ফটোপিগমেন্টের জেনেটিক এই প্যাটার্নটা তুলনা করা যায় ডাইক্রোম্যাটিক স্তন্যপায়ীদের সাথে। তাহলে, এখন প্রশ্নটা হচ্ছে, কেমন করে এদের কেউ কেউ ট্রাইক্রোমাটিক কালার ভিশন অর্জন করলো?
এর উত্তর বিজ্ঞানীরা যেটি খুজে পেয়েছেন তা হলো, নিউ ওয়ার্ল্ড মান্কিদের জিন পুলে X লিঙ্কড পিগমেন্ট জিনের বেশ কিছু ভ্যারিয়ান্ট আছে বা যাদের বলা হয় অ্যালিল (Alleles), অর্থাৎ তারা একে অপরের একটু সামান্য ভিন্ন সংস্করণ তাদের ডিএনএ অনুক্রমের সামান্য কিছু ভিন্নতার কারনে। অনেক জীনের এধরনের অ্যালিলিক ভ্যারিয়েশন আছে। কিন্তু তাদের সামান্য ডিএনএ বেসের অনুক্রমের পারস্পরিক পার্থক্য খুব কম ক্ষেত্রেই তাদের কোডে করা প্রোটিনের কার্য্যাবলীতে প্রতিফলিত হয়। কিন্তু নিউ ওয়ার্ল্ড মান্কিদের এই সব X লিঙ্কড পিগমেন্ট জিনের অ্যালিলগুলো যে পিগমেন্ট প্রোটিনগুলোকে কোড করে, দেখা যায় তাদের বর্ণালী শোষন করার ক্ষমতায় পারস্পরিক ভিন্নতা আছে, অর্থাৎ তারা কিছুটা ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘর আলোকে শোষন করতে পারে বা তাদের স্পেক্ট্রাম সংবেদনশীলতা ভিন্ন। যেমন খুব টিপিক্যাল নিউ ওয়ার্ল্ড মান্কিদের একটি প্রজাতি, স্কুইরেল মান্কি, তাদের জিন পুলে X লিঙ্কড কোন (Cone) পিগমেন্ট জিনের তিনটি অ্যালিল আছে। যার একটি কোড করে মানুষের মত এম(M) পিগমেন্ট, দ্বিতীয়টি মানুষের এল (L) পিগমেন্টের মত আর তৃতীয়টি যে পিগমেন্টটিকে কোড করে সেটির বর্ণালী শোষন করার ক্ষমতা প্রথম দুটোর মাঝামাঝি।
সেক্ষেত্রে, দুটি X ক্রোমোজোম যাদের একসাথে থাকে, অর্থাৎ মেয়ে স্কুইরেল মান্কিরা -এবং শুধুমাত্র মেয়েরাই – হয়তো এই দুটি অ্যালিল সহ X ক্রোমোজোম ( প্রতি X ক্রোমোজোমে একটি করে) উত্তরাধিকার হিসাবে পেতে পারে। ফলে তাদের দুটি X ক্রোমোজোমে দুটি আলাদা আলাদা তরঙ্গ দৈর্ঘর আলো শোষন করার পিগমেন্ট জিন থাকতে পারে, এবং সেভাবে তারা ট্রাইক্রোম্যাটিক কালার ভিশন পেতে পারে। এদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মেয়ে সদস্যরা অবশ্য তাদের দুই X ক্রোমোজোমে একই পিগমেন্ট জিনের অ্যালিল উত্তরাধিকার হিসাবে পাবে, এবং সে কারনের তাদের প্রজাতির দুর্ভাগা পুরুষ সদস্যদের মত তারাও ডাইক্রোম্যাটিক কালার ভিশনই পাবে। নিউ ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের ট্রাইক্রোম্যাসিকে বলা যেতে পারে Poor man’s বা আরো সঠিকভাবে বললে poor woman’s প্রাইমেট ট্রাইক্রোম্যাসির একটি সংস্করণ যা ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটরা ভোগ করে স্ত্রী পুরুষ নির্বিশেষে।
ছবি: প্রাইমেট কালার ভিশনের দুটি ডিজাইনের জেনেটিক ব্যাখ্যা: নিউ ওয়ার্ল্ড এবং ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের ট্রাইক্রোমাসি কালার ভিশনের জেনেটিক ভিত্তির কিছু পার্থক্য আছে। উভয় গ্রুপে একটি জিন যা, ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘর আলো শোষনকারী পিগমেন্টের (নীল) জিনটি থাকে সেক্স ক্রোমোজোমের বাইরে অন্য একটি ক্রোমোজোমে ( মানুষের যেমন ক্রোমোজোম ৭); ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের এটা ছাড়াও বাড়তি দুটি দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর আলো শোষনকারী পিগমেন্ট জিন ( লাল এবং সবুজ) থাকে দুটি X ক্রোমোজোমেই। সেকারনে ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের পুরুষ (যাদের একটি X ক্রোমোজোম থাকে) এবং স্ত্রী সদস্য (যাদের দুটি X ক্রোমোজোম থাকে), উভয়ের ক্ষেত্রে তিনটি পিগমেন্ট জিন থাকে, অর্থাৎ ট্রাইক্রোম্যাট। নিউ ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের X লিঙ্কড দীর্ঘতর তরঙ্গ দৈর্ঘর আলোশোষনকারী পিগমেন্ট জিনটির তিনটি আলাদা বা ভ্যারিয়ান্ট (অ্যালিল) আছে তাদের জিন পুলে ( লাল,হলুদ, সবুজ), কিন্তু কোন একটি X ক্রোমোজোম এদের মধ্য থেকে কেবল একটি অ্যালিলকে বহন করে। এর ফলে শুধুমাত্র স্ত্রী সদস্যরা তার দুটি X ক্রোমোজোমে পৃথক পৃথক দুটি পিগমেন্ট অ্যালিল বহন করতে পারে, আর সেকারনে তারা ট্রাইক্রোমাটিক কালার ভিশনের ক্ষমতা অর্জন করে। সুত্র: ছবি: LUCY READING-IKKANDA (genes); Scientific American, April 2009)
ওল্ড এবং নিউ ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের মধ্যে কালার ভিশনের এই পার্থক্য আসলে এই দুটি গ্রুপের কালার ভিশনের বিবর্তন কেমন করে হলো তার একটি পথ দেখিয়েছে বিজ্ঞানীদেন। এই দুই প্রাইমেটদের লিনিয়েজ আলাদা হবার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে প্রায় ১৫০ মিলিয়ণ বছর আগে আফ্রিকা এবং দক্ষিন আমেরিকা মহাদেশের ভৌগলিকভাবে ধীরে ধীরে পৃথক হবার সময়ে। তাদেরিএই জেনেটিক আইসোলেশন বা বিচ্ছিন্নতাটি সম্পুর্ন হয় প্রায় ৪০ মিলিয়ন বছর আগে। যে কারো মনে সন্দেহ হতে পারে, তবে কি এই দুটি আলাদা লিনিয়েজে ট্রাইক্রোম্যাসিও এসেছে স্বতন্ত্রভাবে, এই দুই লিনিয়েজ পৃথক হবার পরে? দুটো গ্রুপের কালার ভিশনের শুরু হয়তো ছিল ডাইক্রোমাটিক, স্তন্যপায়ীদের মধ্যে পাওয়া স্টান্ডার্ড ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘর এবং একটি দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর পিগমেন্ট ছিল তাদের। ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের মধ্যে দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর পিগমেন্টটি জিনটি থেকে আগে যেমন বলা হয়েছে প্রথমে ডুপ্লিকেশন পরে মিউটেশনের মাধ্যমে তাদের ডিএনএ র বেস অনুক্রমে পার্থক্য হয়ে পৃথক তরঙ্গ দৈর্ঘর আলো শোষন ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি ভিন্ন পিগমেন্ট জিনের উদ্ভব হয়। অপরদিকে নিউওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের মধ্যে দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর পিগমেন্ট জিনটির সিকোয়েন্স বা অনুক্রমে ডাইভারজেন্স বা পার্থক্য এর উদ্ভব হতে পারে একের পর এক মিউটেশনের মা্ধ্যমে, যা তৈরী করে বেশ কয়েক ধরনের ভিন্ন দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর পিগমেন্ট জিনের অ্যালিল, যা নিউওয়ার্ল্ড প্রাইমেট জনসংখ্যার জিন পুলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
কিন্তু অ্যামাইনো অ্যাসিড সিকোয়েন্সের উপর X লিঙ্কড পিগমেন্টগুলোর তুলনামুলক গঠন সংক্রান্ত গবেষনা বলছে অন্যকথা। ওল্ড এবং নিউ ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের সবার এম(M) পিগমেন্টেরই তিনটি অ্যামাইনো এসিডের একটি সেট থাকে যা বর্ণালীর ৫৩০ ন্যানোমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘর আলো সবচেয়ে বেশী শোষন করার জন্য পিগমেন্টটিকে সংবেদী করে:, এবং সব এল(L) পিগমেন্টরই তিনটি অ্যামাইনো এসিডের দ্বিতীয় আরেকটি সেট ব্যবহার করে যা পিগমেন্টটিকে সবচেয়ে বেশী সংবেদী করে বর্ণালীর ৫৬০ ন্যানোমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘর আলো শোষন করার ক্ষেত্রে। দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর এই পিগমেন্টগুলোর আলো শোষন করার স্প্রেক্টাল সংবেদনশীলতা নিয়ে গবেষনা করে গবেষকরা দেখেছেন, কিছু কিছু অ্যামাইনো এসিডের অনুক্রম পরিবর্তন করার মাধ্যমে এই পরিবারের পিগমেন্টেদের সর্বোচ্চ সংবেদনশীলতা দীর্ঘ বা ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘর দিকে পরিবর্তন করা সম্ভব। সেকারনেই, এই দুই প্রাইমেট গ্রুপ স্বতন্ত্রভাবে যে হুবুহু একই ধরনের অ্যামাইনো এসিডের সেট বিবর্তন করবে যারা এই পিগমেন্টের সংবেদনশীলতা দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর আলো শোষনের দিকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে, এই ব্যাপারটা তাদের কালার ভিশনের স্বতন্ত্র বিবর্তনের প্রস্তা্বের ভিত্তিটাকে দুর্বল করে দেয়।
বরং এটা ভাবাই যুক্তিসঙ্গত যে আজকের নিউ ওয়ার্ল্ড মান্কিদের জিন পুলে যেমন অ্যালিলিক ভ্যারিয়েশন দেখা যায় এটাই হয়তো আদি অবস্থা ছিল উভয় গ্রুপের কমন আদি প্রানীদের মধ্যে এবং এদের উদ্ভবই উভয় গ্রপের মধ্যে দেখা ট্রাইক্রোম্যাসি কালার ভিশনের ক্ষমতা অর্জনের প্রথম ধাপ। এই সব ভিন্ন ভিন্ন পিগমেন্ট অ্যালিলগুলোর সম্ভবত উৎপত্তি হয়েছে বেশ কিছু পর্যায়ক্রমিক মিউটেশনের মাধ্যমে, ওল্ড এবং নিউ ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের লিনিয়েজ আলাদা হবার আগে কোন একটা সময়ে। (বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস যে, মধ্যবর্তী ওয়েভলেন্থের পিগমেন্ট উদ্ভবও আগেই হয়েছিল কারন এদের মধ্যে সেই তিনটি অ্যামাইনো অ্যাসিডের অনুক্রমের সাবসেটটি আছে, যা এম প্রোটিন থেকে এল প্রোটিনকে আলাদা করে এবং যেহেতু এর বর্ণালী শোষন স্পেক্ট্রাম এল ও এম এর মধ্যবর্তী) তারপর দুটি প্রাইমেট গ্রুপ আলাদা হবার পর ওল্ড ওয়ার্ল্ড লিনিয়েজের কোন একজন স্ত্রী সদস্যর X ক্রোমোজোমে একটি দুষ্প্রাপ্য রিকম্বিনেশন ভ্রান্তি হয় যার মধ্যে ঘটনাক্রমে দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর পিগমেন্ট জিনের এর দুটি ভিন্ন অ্যালিল ছিল। এই ঘটনাটি একটি X ক্রোমোজোমে একটি এম (M ) অ্যালিলকে,একটি এল (L) অ্যালিলের পাশাপাশি প্রতিস্থাপিত করে।ফলে ট্রাইক্রোম্যাসি কালার ভিশনের ক্ষমতা শুধু স্ত্রী সদস্য না পুরুষ সদস্যরাও লাভ করে।
ছবি: কেমন করে প্রাইমেট ট্রাইক্রোম্যাসি বিবর্তন হয়েছে: নিউ ওয়ার্ল্ড এবং ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের ট্রাইক্রোমাসি কালার ভিশনের জেনেটিক ভিত্তির তুলনামুলক গবেষনা ইঙ্গিত করে প্রধান বিবর্তনীয় ধাপটিকে যা নিউ ওয়ার্ল্ড মান্কিদের কিছু স্ত্রী সদস্য এবং ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের উভয় লিঙ্গের সদস্যদের ট্রাইক্রোমাটিক কালার ভিশনের সুচনা করেছে। উভয় নিউ ওয়ার্ল্ড এবং ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের একটি কমন আদি প্রানীদের মধ্যে, একটি আদি X লিঙ্কড দীর্ঘতর দৈর্ঘর আলো শোষনকারী পিগমেন্ট জিন ( সর্ববামে সবুজ) বেশ কয়েকটি পর্যায়ে মিউটেশনের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে তিনটি দীর্ঘতর দৈর্ঘর আলো শোষনকারী পিগমেন্ট জিনের অ্যালিল সৃষ্টি করে তাদের জীন পুলে (সবুজ,হলুদ,লাল); এই পরিবর্তন এখনো বিদ্যমান আধূনিক নিউ ওয়ার্ল্ড মান্কিদের মধ্যে। নিউ ওয়ার্ল্ড এবং ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের লিনিয়েজ পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে সম্পুর্ন আলাদা হয়ে যাবার পর একটি রিকম্বিনেশন (যে প্রক্রিয়ায় ক্রোমোজোম তাদের অংশগুলো পারস্পরিক আদান প্রদান করে শুক্রানু ও ডিম্বানু তৈরী করার সময়) – এরর বা ভূল; কোন একটি আদি ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রাইমেট স্ত্রী সদস্যর একই X ক্রোমোজোমে দুটি অ্যালিল পাশাপাশি নিয়ে আসে (সর্ব ডানে); যেহেতু এই নতুন পরিবর্তন বা অবস্থা ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রাইমেট পুরুষ এবং নারী সদস্যদের উভয় ক্ষেত্রে বাড়তি বিবর্তনীয় বা নির্বাচনী সুবিধা প্রদান করে, সে কারনে এই পরিবর্তনটি ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রাইমেট পপুলেশনের একটি স্বাভাবিক অবস্থায় রুপান্তরিত হয়। সুত্র: ছবি: LUCY READING-IKKANDA (genes); Scientific American, April 2009)
এই জেনেটিক নতুনত্বটি এতো শক্তিশালী নির্বাচনী সুবিধা প্রদান করে এদের বাহকদের, যে শুধুমাত্র একটাই দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘের পিগমেন্ট জিন সহ X ক্রোমোজোমগুলো একসময় ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের জিন পুল থেকে হারিয়ে যায়। কিন্তু ভৌগলিক এবং জেনেটিক্যালী বিচ্ছিন্ন নিউ ওয়ার্ল্ড প্রাইমেট আদি তিনটি দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘের পিগমেন্ট জিনের অ্যালিল জিন পুলে থেকে যায়।
র্যানডোমনেস এর ভুমিকা:
ডঃ জ্যাকবস এবং ডঃ নাথানস এর গবেষনার আরো একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো নিউ এবং ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের ট্রাইক্রোম্যাটিক কালার ভিশনের ক্ষেত্রে র্যানডমনেসের ভুমিকা। এই র্যানডোমনেস বলতে কিন্ত র্যানডম জেনেটিক মিউটেশন বোঝাচ্ছে না, যা একবারে শুরুতে প্রয়োজনীয় পিগমেন্ট জিনগুলোর উদ্ভবের কারন এবং যা এর বাহকদের ট্রাইক্রোম্যাসি কালার ভিশনের ক্ষমতা প্রদান করেছে। জীববিজ্ঞানীরা সাধারনতঃ পর্যবেক্ষন করেছেন, যখনই কোন উপকারী কোন বৈশিষ্ট্যর আবির্ভাব ঘটে এরকম কোন চান্স মেকানিজমের মাধ্যমে, এটা সচরচর হার্ড ওয়্যারড হয়ে যায: অর্থাৎ কোষের যে প্রক্রিয়া সমুহ যা সাধারনত: পুর্বনির্দেশিত কোন ব্লুপ্রিন্টের বাইরে যায়না, তারাই সযত্নে সেই ট্রেইটটি প্রত্যেকটি সদস্যর মধ্যে বিকাশের প্রক্রিয়াটা নিয়ন্ত্রন করে। তারপরও বিজ্ঞানী মনে করেন, প্রাইমেটদের কালার ভিশনের ক্ষেত্রে র্যানডম ইভেন্টগুলো প্রতিটি সদস্য এবং এমনকি প্রতিটি বিকাশমান কোন কোষে অনেক গুরুত্বপুর্ণ এবং আসলেই প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে।
র্যানডমনেস কিভাবে ট্রাইক্রোমাসি কালার ভিশনের উদ্ভবে সহায়তা করে সেটা ব্যাখ্যা করতে গেলে প্রথমে জানতে হবে কোন ফটোরিসেপ্টর কোষগুলো রঙ সংক্রান্ত তথ্য কিভাবে ব্রেনে প্রেরণ করে। গবেষনায় দেখা গেছে যে, তিন ধরনের ফটোপিগমেন্ট থাকাটা ট্রাইক্রোমাটিক কালার ভিশনের জন্য আবশ্যিক ঠিক আছে, তবে এটা শুধু এর প্রাথমিক একটা শর্ত, কারন আরো কিছু বিষয়কে এর সাথে যুক্ত হতে হয়। বিভিন্ন ফটোরিসেপ্টর থেকে উৎপন্ন স্নায়ুসংকেতের প্রসেসিং বা প্রক্রিয়াকরনটা হচ্ছে প্রয়োজনীয় পরবর্তী ধাপ। এই পর্যায়টি খুবই ক্রিটিকাল কারন স্বতন্ত্রভাবে কোন কোন কোষ তাকে উত্তেজিত করা আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ সম্বন্ধে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনা। কারন প্রত্যেকটি ফটোরিসেপ্টর আলাদা আলাদাভাবে বেশ কয়েকে রেন্জের তরঙ্গ দৈর্ঘ সম্পন্ন আলো দ্বারা সক্রিয় হতে পারে, কিন্তু কোন কোষ আলাদা করে আলোক বর্ণালীর কোন তরঙ্গ দৈর্ঘ সে শোষন করেছে, সেই সুনির্দিষ্ট স্নায়বিক তথ্য সংকেতটা দিতে পারেনা। যেমন, কোন কোষ একই ধরনের বা সাইজের সংকেত তৈরী করে: যখন সবচেয়ে ভালো শোষন করতে পারে এমন কোন তরঙ্গ দৈর্ঘর ১০০ ফোটন কনা তাকে আঘাত করে কিংবা সে কম শোষন করতে পারে এমন তরঙ্গ দৈর্ঘর ১০০০ ফোটন কনা আঘাত করে। তাই রঙের মধ্যে পার্থক্য করতে গেলে আমাদের ভিজ্যুয়াল সিস্টেমকে এর ভিন্ন পিগমেন্ট বিশিষ্ট পাশ্ববর্তী কোন কোষগুলো থেকে আসা রেসপন্সের সাথে তুলনা করতে হয়।
রঙ পার্থক্য করার এধরনের একটি তুলনামুলক প্রক্রিয়া ভালোভাবে কাজ করতে হলে প্রতিটা কোন কোষে মাত্র এক ধরনের পিগমেন্ট থাকতে হবে থাকে আর কোন ভিন্ন ভিন্ন পিগমেন্ট সহ কোন কোষগুলোকে পাশাপাশি অবস্থান করতে হবে অনেকটা মোজাইকের মত। এবং বাস্তবেও প্রাইমেট রেটিনার প্রত্যেকটি কোন কোষ মাত্র এক ধরনের ফটো পিগমেন্ট বহন করে এবং ভিন্ন ভিন্ন কোন কোষগুলো সাজানো থাকে প্রয়োজনীয় মোজাইক প্যাটার্নে। তারপরও ট্রাইক্রোমাটিকদের প্রতিটি কোন কোষে কিন্তু এই তিনটি পিগমেন্টের জিনই থাকে, ঠিক কিভাবে একটি কোন কোষ ‘সিদ্ধান্ত’ নেয় শুধু মাত্র একটি পিগমেন্ট জিনকে এক্সপ্রেস করার জন্য, সে বিষয়টি এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট না।
সাধারনতঃ কোষরা তাদের জিনগুলো সক্রিয় বা এক্সপ্রেস করে ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর ব্যবহার করে। ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টররা হচ্ছে খুব নির্দিষ্ট একধরনের প্রোটিন যারা ডিএনএ র সাথে যুক্ত হতে পারে। এরা ডিএনএর কোন নির্দিষ্ট জিনকে নিয়ন্ত্রন করে এমন কোন জায়গায়, যাদের বলা হয় প্রোমোটার রিজন ( ডিএনএর কোন সিকোয়েন্স) সেখানে নিজেদের সংযুক্ত করতে পারে এটিকে সক্রিয় করার জন্য। প্রোমোটার রিজন সক্রিয় হলে বেশ কিছু বহু ধাপ বিশিষ্ট ধারাবাহিক কিছু প্রতিক্রিয়া হয়, যার ফলে সেই জিনটি দ্বারা এনকোডেড প্রোটিনটা তৈরী হয়। ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘর পিগমেন্ট আছে এমন ফটোরিসেপ্টর কোন কোষগুলো, ভ্রুনাবস্থায় পিগমেন্টের ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টরটাকে সক্রিয় করে। এখনও অজানা কোনো একটি প্রক্রিয়া এই সব এস (S) পিগমেন্ট সহ কোষগুলোতে দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর পিগমেন্ট জিনগুলোকে এক্সপ্রেস হতে দেয়না।
কিন্তু নিউ ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের কোন কোষে একটা অতিরিক্ত মেকানিজম দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর পিগমেন্ট সহ কোন ফটোরিসেপ্টরের জিন এক্সপ্রেশনকে নিয়ন্ত্রন করে । আর এই প্রক্রিয়াটা মুলত: র্যানডোম একটি প্রক্রিয়া। নিউ ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের স্ত্রী সদস্যদের, যাদের দুটি X ক্রোমোজোমে দুটি ভিন্ন ফটোপিগমেন্ট জিনের অ্যালিল থাকে, কোনো একটি কোন কোষে জিনের কোন অ্যালিলটা এক্সপ্রেস হবে তা নির্ভর করে একটি মলিকিউলার কয়েন টস এর উপর, যার নাম X-ইনঅ্যাক্টিভেশন। এই প্রক্রিয়ায় প্রতিটি স্ত্রীকোষ র্যানডোমভাবে তাদের দুটি X ক্রোমোজোমের একটিকে নিষ্ক্রিয় করে রাখে ভ্রুন বিকাশের প্রথম দিকে। X-ইনঅ্যাক্টিভেশন নিশ্চিৎ করে শুধু মাত্র একটি পিগমেন্ট অ্যালিল এক্সপ্রেস হবে (অর্থাৎ ঐ দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর পিগমেন্ট সহ কোন কোষটিতে শুধুমাত্র একধরনের দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর পিগমেন্ট পিগমেন্টই তৈরী হবে) দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর পিগমেন্ট জিনের অ্যালিলদের মধ্যে। যেহেতু প্রসেসটা র্যানডোম, সব কোষগুলোর অর্ধেকটিতে একটি X ক্রোমোজোমে থাকা জিনটি এক্সপ্রেস হয়, বাকী কোষগুলোয় দ্বিতীয় X ক্রোমোজোমের জিনটা এক্সপ্রেস হয়। এই প্রক্রিয়া নিশ্চিৎ করে দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর পিগমেন্ট পিগমেন্ট কোনগুলো নিউ ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের স্ত্রী সদস্যদের রেটিনায় মিশ্রিত থাকে মোজাইক প্যাটার্নে যা তাদের ট্রাইক্রোম্যাটিক কালার ভিশন নিশ্চিৎ করে।
ছবি: রেটিনার র্যানডোমনেস: রেটিনায় প্রত্যেকটি কোন কোষে তিনটি রঙ এর ফটোপিগমেন্ট জিন থাকে, কিন্তু প্রতিটি কোষ এই তিনটির একটিকে সক্রিয় করে বাকী দুটিকে নিষ্ক্রিয় করে রাখে। ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘর ফটোপিগমেন্ট এর এক্সপ্রেশনের সিলেকশন কেমন করে হয় এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় দুটি দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘ ফটোপিগমেন্ট এর একটাকে একপ্রেশনের জন্য নির্বাচন করে সেটি মনে করা হচ্ছে র্যানডোম একটি প্রক্রিয়া। আর রেটিনায় দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘ পিগমেন্ট বিশিষ্ট কোনও বিন্যাসও র্যানডোম ( রেটিনার দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর ফটোপিগমেন্ট বিশিষ্ট কোন কোষের বিন্যাসের একটি কম্পিউটার রেনডিশন); সুত্র : COURTESY OF DAVID WILLIAMS University of Rochester (retina);Scientific American, April 2009)
ছবি: নিউ ওয়ার্ল্ড কয়েন টস: নিউ ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর ফটোপিগমেন্ট জিন সিলেকশন হয় X ইনঅ্যাক্টিভেশনের মাধ্যমে। যে প্রক্রিয়া একটি স্ত্রী কোষ র্যানডোমভাবে এর দুটি X ক্রোমোজোমের একটাকে নিষ্ক্রিয় করে দেয় ভ্রুনাবস্থার শুরুর দিকে। যদি স্ত্রী সদস্যটির ভিন্ন পিগমেন্ট অ্যালিল থাকে তার X ক্রোমোজোম দুটিতে, প্রতিটি কোন কোষে এদের একটি X ক্রোমোজোমকে নিষ্ক্রিয় করলে দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর ফটোপিগমেন্টের একটি মোজাইক প্যাটার্ন তৈরী হবে । সুত্র: LUCY READING-IKKANDA (genes); Scientific American, April 2009)
সকল স্তন্যপায়ী প্রানীদের ক্ষেত্রে এই X-ইনঅ্যাক্টিভেশন ব্যাপারটা হয়, আর এটা প্রজাতির বেচে থাকার জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয় একটি প্রক্রিয়া। এটি ছাড়া, স্ত্রীকোষগুলো দুটো X ক্রোমোজোমই ব্যবহার করতো প্রোটিন তৈরীতে, ফলে দুই লিঙ্গের সদস্যদের মধ্যে মোট প্রোটিনের পরিমানের ব্যবধান তৈরী হতো, যা তাদের একটি বা উভয় লিঙ্গের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যহত করতো। যেহেতু ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের যাদের এম(M) ও এ (L) দুটি পিগমেন্ট জিনই থাকে তাদের দুটি X ক্রোমোজোমের প্রত্যেকটিতে, তাই X-ইনঅ্যাক্টিভেশন প্রক্রিয়া একক ভাবে প্রতিটি কোন কোষে শুধুমাত্র একটি পিগমেন্ট জিনের এক্সপ্রেশনেই সীমাবদ্ধ করে রাখতে পারে না। নিশ্চয়ই এখানে অন্য কোন একটা মেকানিজম কাজ করে। ডঃ নাথানস তার গবেষনায় দেখেন, ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের কোন ফটোরিসপ্টর কোষে কোন X লিঙ্কড পিগমেন্ট জিনটি এক্সপ্রেস হবে তা নিয়ন্ত্রন করে কাছাকাছি জিনটির কাছাকাছি অবস্থান করা একটি ডিএনএ অনুক্রম: লোকাস কন্ট্রোল রিজিয়ন (Locus Control Region)। এই বেছে নেবার প্রক্রিয়াটা ঘটে সম্ভবতঃ ভ্রুণবিকাশের সময়, যখন প্রতিটি কোন কোষে এই লোকাস কন্ট্রোল রিজিয়ন পাশাপাশি থাকা দুটি পিগমেন্ট জিনের শুধু মাত্র একটির প্রোমোটার রিজিয়নের সাথে ইন্টারঅ্যাকশনে আসে, হয় এম(M) বা এল(L) পিগমেন্ট, অর্থাৎ দুটি পিগমেন্ট জিনের সাথে একসাথে না, যে কোন একটি ফটোপিগমেন্ট জিনকে সুইচ অন করে। এই ইন্টারঅ্যাকশনের খুটিনাটি অনেক কিছু সন্ধানে এখনো গবেষনা চলছে, কিন্তু আপাততঃ গবেষনার ফলাফল বলছে এই বেছে নেয়াটা ঘটে র্যানডোম ভাবেই।
ছবি: ওল্ড ওয়ার্ল্ড সেরেনডিপিটি:ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের দুই ধরনের দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর ফটোপিগমেন্ট জিন থাকে একটি X ক্রোমোজোমে। সুতরাং আরো একটি অতিরিক্ত ধাপের প্রয়োজন আছে প্রতিটি কোণ কোষে একটি পিগমেন্ট সিলেকশন করতে। X ইনঅ্যাক্টিভেশনের মাধ্যমে একটি এক্স ক্রোমোজোম আগে নিষ্ক্রিয় হয় স্ত্রী কোষে, তারপর দুই লিঙ্গের কোষগুলোতে একটি জিন রেগুলেটর,যার নাম লোকাস কন্ট্রোল রিজন (locus control region) বা LCR র্যানডোমভাবে এর দুটি দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর ফটোপিগমেন্ট জিনের একটির সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করার পর শুধুমাত্র সেটাকে সক্রিয় করে এবং আবারো কোন কোষের একটি মোজাইক প্যাটার্ন তৈরী হবে ।সুত্র: LUCY READING-IKKANDA (genes); Scientific American, April 2009)
যদি লোকাস কন্ট্রোল রিজিয়ন আর কোন একটি প্রোমোটার রিজনের মধ্যে সংযোগ যদি আসলেই সুনির্দিষ্ট করে দেয় নির্দিষ্ট কোন ফটোরিসেপ্টর কোষে কোন পিগমেন্ট জিনটি এক্সপ্রেস হবে এবং যদি আসলে এই প্রক্রিয়াটি র্যানডোম প্রকৃতি হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রাইমেটদের রেটিনা যে কোন ছোট জায়গাতে তাহলে এম এবং এল কোন কোষের বিন্যাসও তবে র্যানডোম হওয়া উচিৎ। রোচেষ্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভিড উইলিয়ামস ও তার সহযোগীরা দেখিয়েছেন কোন কোষের বিন্যাস মাপার জন্য বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতির কারিগরী সীমার মধ্যে যতটুকু দেখা গেছে, তা ইঙ্গিত করে এই ধারনা ভুল না।
ঘটনাচক্রে পাওয়া যে রঙ্গীন দৃষ্টি :
প্রাইমেটদের কালার ভিশনের ভিত্তি নিয়ে গবেষনাগুলো আরো প্রমান করে যে, রেটিনা ও ব্রেনের সুনির্দিষ্ট যে প্রক্রিয়াগুলো দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর কালার ভিশনের সাথে সংশ্লিষ্ট তারা খুব বেশী প্লাষ্টিক বা নমনীয়, অন্যভাবে বললে, প্রক্রিয়াগুলো নতুন করে প্রয়োজনুসারে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারে প্রয়োজনীয় স্নায়ু সংকেতে সাথে। যদিও একেবারে ডেডিকেটেড বা সুনির্দিষ্টভাবে নিবেদিত স্নায়বিক সার্কিটের অস্তিত্ব রয়েছে যারা এস(S) পিগমেন্ট সহ কোন কোষ থেকে আসা ভিজুয়াল তথ্য গুলো, অন্য দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর কোনগুলো (এম ও এল) থাকা আসা সম্মিলিত সিগন্যালের সাথে তুলনা করতে পারে রঙ এর প্রকৃতি নির্নয়ে; কিন্তু দেখা গেছে ব্রেন একটু বেশী সৃজনশীলতার পরিচয় দেয় যখন সে দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর কোনগুলো (এম এবং এল কোন) থেকে আসা সিগন্যালগুলোকে পারস্পরিক তুলনা করে প্রসেস করতে। বিশেষ করে বিজ্ঞানীরা যেটাদেখেছেন সেটা হলো ব্রেনের ভিজুয়াল সিস্টেম শুধু মাত্র অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই সব কোন কোষগুলো (এম এবং এল কোন) শনাক্ত করতে পারে, অর্থাৎ কোন ভিজুয়াল স্টিমুলাই বা দৃষ্টি সংকেতের এর প্রতি কোন কোষগুলোর আচরন মনিটর করে।
এছাড়া্ও দেখা গেছে, যে প্রধান নিউরাল পথটা যা কিনা এই সব দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর কোনগুলো থেকে সংকেত বহন করে আনে ব্রেনে, তারা হয়তোবা শুধু মাত্র কালার ভিশনের জন্যই নিবেদিত নয়। বরং এম ও এল কোন থেকে রঙ সংক্রান্ত তথ্য বের করে আনার ক্ষমতাটি খু্ব সম্ভবত একটি হ্যাপি অ্যাক্সিডেন্ট বা সুখকর দুর্ঘটনা বলা যেতে পারে, যা সম্ভব হয়েছে হাই রেজুলেশন সম্পন্ন স্পাশিয়াল ভিশনের (Spatial Vison) একটি প্রাচীন নিউরাল পথের কল্যানে। স্পাশিয়াল ভিশন বিবর্তিত হয়েছে, কোন বস্তুর সীমানা বা এর প্রান্তগুলো এবং দর্শকের কাছ থেকে এর দুরত্ব বোঝার জন্য। ক্যামব্রীজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ জন মলোন দেখিয়েছেন যে, প্রাইমেটদের এই উচু মাত্রার রেজুলেশনের স্পাশিয়াল ভিশন আসলে সম্ভব হয় দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর কোনগুলোর মাধ্যমে এবং এই প্রক্রিয়ায় ঠিক একই স্নায়বিক প্রক্রিয়ার ব্যবহৃত হয়, দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর কোনগুলোর যে স্নায়বিক প্রক্রিয়া কালার ভিশনের সময়ও ব্যবহার করে থাকে। অর্থাৎ একটি এম বা এল কোন কোষের সক্রিয় উত্তেজনার ফলাফলের সাথে এর আশে পাশের অনেকগুলো এল বা এম কোনের উত্তেজনার আপেক্ষিক পরিমান তুলনা করার মাধ্যমে। এখনও পর্যন্ত কোন পৃথক নিউরাল সার্কিট্রি পাওয়া যায়নি দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর কালার ভিশনের জন্য এবং হয়তোবা তার কোন প্রয়োজনও নেই। এই আলোকে ট্রাইক্রোমাটিক কালার ভিশনকে মনে করা যেতে পারে আগে থেকেই উপস্থিত প্রাইমেটদের স্পাশিয়াল ভিশন সিস্টেমের একটা হবি।
কালার ভিশনের এই নিউরাল প্লাস্টিসিটি বিজ্ঞানীদের আরো একটা প্রশ্নের মুখোমুখি করে; তাদের ধারনা অনুযায়ী, প্রাইমেট ট্রাইক্রোম্যাটিক কালার ভিশনের বিবর্তনের প্রথম ধাপ হচ্ছে, বর্তমান সকল প্রাইমেটদের আদি কোন কমন একজন সদস্যর মধ্যে একটি দ্বিতীয় একটি দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর জিনের X লিঙ্কড অ্যালিল এর উদ্ভব। তাহলে আদি প্রাইমেট ব্রেন কি এই সাথে সাথে এই নতুন এই পিগমেন্ট ‘ব্যবহার’ করার জন্য যথেষ্ট পরিমান উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দিয়েছিল, কোন এই নির্দিষ্ট নিবেদিত নিউরাল সার্কিট্রি তৈরী করা ছাড়াই? শুধু মাত্র তৃতীয় একটি ফটো পিগমেন্ট এর উদ্ভবই কি যথেষ্ট ছিল কালার ভিশনে আরো একটি নতুন মাত্রা যোগ করার জন্য?
ডঃ জ্যাকবস এবং ডঃ নাথানস এই ধারনাটাকে একটা পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝার চেষ্ঠা করেছিলেন। তারা ভাবলেন, প্রাইমেট ট্রাইক্রোমাসির বিবর্তনের প্রথম ধাপ আবার পরীক্ষামুলকভাবে সৃষ্টি করা যায় কিনা; তারা বেছে নিয়েছিলেন ডাইক্রোমাটিক একটি স্তন্যপায়ী প্রানীর: ল্যাবরেটরী ইদুর। তারা তাদের এই পরীক্ষা শুরু করেন মাউসটির একটা X ক্রোমোজোমকে জেনেটিক্যালী ইন্জ্ঞিনিয়ারীং করার মাধ্যমে, এর ফলে ইদুরটির X ক্রোমোজোমটি মাউসের এম(M) পিগমেন্টের বদলে মানুষের এল(L) পিগমেন্টটি এনকোড করে। এভাবে তারা একটি অ্যালিলিক ভ্যারিয়েশন ইদুরের ডিএনএর মধ্যে যোগ করলেন, বহু মিলিয়ন বছর আগে যেরকম একটি অ্যালিলিক ভ্যারিয়েশন বিজ্ঞানারা বিশ্বাস করেন ডাইক্রোমাটিক প্রাইমেট আদি প্রানীদের মধ্যে প্রথম উদ্ভব হয়েছিল। এর পর তারা প্রমান করে দেখালেন যে এই জিন বহন কারী ইদুরগুলো তাদের রেটিনার কোন ফটোরিসেপ্টর সেলে মানুষের এল পিগমেন্ট জিনটিকে এক্সপ্রেস করছে আর এই এল পিগমেন্টগুলো ইদুরের এম পিগমেন্টের প্রায় সমদক্ষতায় ব্রেনে সংকেত পাঠাচ্ছে। উপরন্তু, কোন কোষে এল পিগমেন্ট এক্সপ্রেস করা ইদুরগুলো যেমনটা ভাবা হয়েছিল, সাধারন ইদুরদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত আরো বড় রেন্জের তরঙ্গ দৈর্ঘর আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা প্রকাশ করছে।
ছবি :জেনেটিক্যালী ইন্জ্ঞিনিয়ার করা ইদুরগুলো শিখেছে তিনটি প্যানেলের মধ্যে একটির দিকে যেতে, যার রঙ অন্যদের চেয়ে ভিন্ন; বিষয়টি যা প্রমান করে তা হলো এই জেনেটিক্যালী ইন্জ্ঞিনিয়ার করা ইদুরগুলো এই কমলার শেডটি দেখতে পায়, যে রঙটি সাধারন ডাইক্রোম্যাট ইদুর, নীল রঙের থেকে আলাদা করে বুঝতে পারে না। আর ইদুরগুলো এই ক্ষমতা পায় কারন এদের নিজস্ব দুটি পিগমেন্ট জিন ছাড়াও মানুষের দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘর ফটোপিগমেন্টটিও থাকে । এই পরীক্ষাটি স্তন্যপায়ী ব্রেনের অসাধারন প্লাষ্টিসিটিকে প্রমান করেছে, কারন ইদুরগুলো তাদের জন্য সম্পুর্ন নতুন এই পিগমেন্ট ব্যবহার করতে পারে, স্নায়ুকোষগুলোর এদের সংকেত ইন্টারপ্রেট করার মতো বিশেষভাবে সাজানো না থাকা সত্ত্বেও। সুত্র: KRIS KROGH (mouse); Scientific American, April 2009);
তারা যে মুল প্রশ্নটার ব্যাখ্যা খুজলেন তা হলো: এই স্ত্রী ইদুরগুলো যাদের দুটি ভ্ন্নি X ক্রোমোজোম পিগমেন্ট জিন আছে, তারা কি র্যানডোম X ইনঅ্যাক্টিভেশনের মাধ্যমে সৃষ্ট এম ও এল কোনের রেটিনাল মোজাইক তাহলে শুধু রঙের অনুভুতি সৃষ্টিই না, দীর্ঘতর তরঙ্গ দৈর্ঘর বর্নালীর আলোগুলোকে পার্থক্য করতে পারে? এর সংক্ষিপ্ত এবং বিস্ময়কর উত্তর হলো, হ্যা; তারা পারে।
ল্যাবরেটরি টেষ্টে, তারা এই স্ত্রী এম (M) ও এল (L) পিগমেন্ট সহ ইদুরগুলোকে সবুজ, হলুদ, কমলা, লাল প্যানেলগুলো শনাক্ত করতে প্রশিক্ষন দিতে সক্ষম হয়েছেন, যা সাধারন ইদুরদের কাছে দেখতে একই রকম । এই নতুন এল পিগমেন্ট সহ এই ইদুরগুলোকে দেখা যাচ্ছে সেন্সরী (এ ক্ষেত্রে ভিজুয়াল) অভিজ্ঞতার নতুন একটি মাত্রা অর্জন করেছে। যা প্রমান করে স্তন্যপায়ীদের ব্রেনের জন্মগত ক্ষমতা আছে নতুন এবং গুনগতভাবে বিভিন্ন ধরনের ভিজুয়াল ইনপুটগুলো থেকে তথ্য বের করে নিতে পারার।
আমাদের সেন্সরী সিস্টেমের বিবর্তনে বোঝার ক্ষেত্রে এই তথ্যের গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা আছে। কারন এই গবেষনা প্রস্তাব করে যে, সেন্সরী সিস্টেমের ‘ফ্রন্ট এন্ডে’ বা সামনের দিকে কোন পরিবর্তন -যেমন সেন্সরি রিসেপ্টরদের জিন পরিবর্তন করলে- পুরো সিস্টেমটির বিবর্তনকে পরিচালনা করতে পারে। প্রাইমেট ট্রাইক্রোম্যটিক কালার ভিশন ক্ষেত্রে, ল্যাবরেটরী ইদুরের উপর এই পরীক্ষা আরো প্রস্তাব করে যে, একেবারে প্রথম যে প্রাইমেট, যার দুটি ভিন্ন দীর্ঘতর দৈর্ঘর তরঙ্গ দৈর্ঘর পিগমেন্ট ছিল, সে যে প্রথম পৃথিবীর রঙ দেখেছিল, তার আগে আর কোন প্রাইমেট তা দেখেনি।
সাম্প্রতিক মন্তব্য