সহী মুসলিম নাস্তিক!
আপনারা আমাকে যা খুশী ভাবতে পারেন। আমি কিন্তু নিশ্চিত, আমি একজন সহী মুসলিম নাস্তিক।
আমি কোনভাবেই শুধু একজন সাধারণ “নাস্তিক” না, কারণ আমি মনে মনে এখনও গভীরভাবে বিশ্বস করি, কিছু একটা আছে। তবে সেই কিছু একটার নাম, ঠিকানা, কর্ম পরিধি এবং কর্ম পদ্ধতি সম্পর্কে নিশ্চিত না। তাদের ব্যপারে আমি যথেষ্ট সন্দেহপ্রবন অথবা উদাসী।
অন্য কোন ধর্মে কি বলা আছে, জানি না। কিন্তু, মুসলিম পরিবারে জন্মে, ইসলাম ধর্মের ভিতরে কয়েক যুগ কাটিয়ে যেটুকু বুঝেছি, তা হচ্ছে – আল্লাহ থাকলেও তিনি কোনভাবেই সর্বশক্তিমান না। কারন কোরান, হাদিস তন্নতন্ন করে খুঁজেও, কোনদিন কারো সাথে কুস্তি বা মুষ্টিযুদ্ধ করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, এরকম কোন কথা পাইনি।
আল্লাহপাকের শক্তিসামর্থের কথা বাদ দিলাম। তার সাহসের বিষয়ে চিন্তা করতে গিয়ে দেখি, কোন কোন সময়ে, কিছু কিছু এলাকায় তিনি বিশেষভাবে অনুপস্থিত থাকেন। অনেক ডাকাডাকি করেও তার কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না। সেসময় সেসব জায়গার মানুষরা অনেক অনুনয় বিনয় করে তার কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে, আল্লাহর ভরশায় বসে না থেকে পুরোদস্তুর নাস্তিক হয়ে যায়। তারা তখন অস্ত্রপাতি নিয়ে নিজেরাই ইসলাম ধর্ম প্রতিস্ঠার কাজে নেমে যায়।
আল্লাহপাকের মেজাজ-মর্জি বোঝা মুশকিল। তিনি আদম-হাওয়া বানিয়ে, শয়তানের উপর রাগ করে তার শাস্তি দিলেন আদম-হাওয়াকে বেহেশত থেকে ধড়াম করে পৃথিবীতে ফেলে দিয়ে। এরপর তারা কত কষ্টে বংশবৃদ্ধি করলেন। কিন্তু আল্লাহ আবার একসময় রাগ করে সারা পৃথিবী পানিতে ডুবিয়ে অল্প কয়েকজন ছাড়া সব মানুষ এবং জীবজন্তু সাফা করে দিলেন। এখনো মাঝেমধ্যে তিনি রেগে গিয়ে ঝড়-তুফান, ভূমিকম্প, বজ্রপাত ইত্যাদির মাধ্যমে তার বিচ্ছিন্ন এবং সিরিজ সন্ত্রাসী হামলা অব্যাহত রেখেছেন। অন্যদিকে, তার হাতের নিশানাও সুবিধার না। শুধু বজ্রপাত করে শয়তানকে মারতে গিয়ে আজ পর্যন্ত অগণিত নিরীহ মানুষ, জীবজন্তু ও গাছপালা মেরে ফেলেছেন, এটাই তার প্রমান।
তার কোন কাজকর্মই নিখুঁত না। একশোটা মানুষ বানালে তার ১০/১৫ টা হবে পাগল, বিকলাঙ্গ, গবেট বা রোগগ্রস্ত। তার সৃষ্টি যে নিখুঁত না, তার বড় প্রমান – জন্মের কিছুদিন পরই সকল মুসলিম পুরুষদেরকে খৎনা করিয়ে নিখুঁত করার চেষ্টা করতে হয়।
তার সাহিত্য প্রতিভা প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি যে কয়টি উপন্যাস, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা এবং আইনকানুন সংক্রান্ত বই লিখেছেন সেগুলোর প্রত্যেকটিকেই বেশীরভাগ মানুষ অবিশ্বাস করেছে, অগ্রাহ্য করেছে। উপরন্তু, তার এইসব বইপুস্তকের মূল বক্তব্য ও ব্যখ্যা নিয়ে নানান ধরনের বিতর্ক এবং রক্তপাত হয়েছে।
একটা মানুষ কেমন, তা বোঝার সহজ একটা উপায় হচ্ছে, সে কার সাথে মেলামেশা করে, তার বন্ধুবান্ধব কারা, এবিষয়ে খোঁজ নেয়া। আল্লাহপাকের কোন বন্ধু বা বান্ধবী আছে – এরকম কোথাও শুনিনি। এদিক থেকে তাকে একেবারেই অসামাজিক বলে মনে হয়। কিছু কিছু মানুষ নিজেদেরকে আল্লাহর বন্ধু দাবী করলেও এদের সবাই ছিল তারছেঁড়া টাইপের। এদের কারোকারো চরিত্র নিয়ে শিক্ষিত সমাজে ব্যপক কানাঘুষা আছে।
অবসর সময়ে আল্লাহপাক কি করেন, তা নিয়ে কোথাও কিছু বলা হয়নি। তবে তিনি যে গান-বাজনা, নাটক-সিনেমা, ম্যাজিক-সার্কাস, চিত্রাঙ্কন, ইত্যাদির কোনটাই পছন্দ করেন না, এবিষয়ে পরিস্কার বলে দিয়েছেন। মন খারাপ হলে দু’এক পেগ খেয়ে উদ্যম ফীরে পাবেন, তারও কোন ব্যবস্থা রাখেননি। অবসর বিনোদন ছাড়া একটানা কাজ করতে থাকলে কেউ সুস্থ থাকতে পারে?
শেষ খবরাখবর পাঠানোর দেড়হাজার বছর পার হতে চললো। তার বর্তমান হাল হকিকত কি, তবিয়ত কেমন, মেজাজ-মর্জির কি অবস্থা, কোন লেটেস্ট আপডেট আছে কিনা, জানার কোন উপায় নাই।
আর এতকিছু ভাবনাচিন্তা এবং জানার পর আমাকে আর মুসলিম বলা যাবে কিনা, সন্দেহ আছে। কাজেই আমি নাস্তিক হলেও এটা শুধুমাত্র সহী ইসলাম ধর্মের বিচারে। অন্য কোন ধর্ম অনুযায়ী কিংবা বাস্তবেও কোনকিছু থাকা বা না থাকা নিয়ে আমার কোন চিন্তাভাবনা বা মাথাব্যথা নাই। তাই সব মিলিয়ে, আমার মনে হয়, আমি একজন সহী মুসলিম নাস্তিক।
“সহী মুসলিম নাস্তিক” বা ইসলামবিদ্বেষী পরিচয়ে পরিচিত হতে অনেকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন, সরাসরি বা ইনিয়ে বিনিয়ে অস্বীকার করতে চান। কিন্তু আমি যতদূর বুঝি, এই দলটাই সবচেয়ে ভারি। বললেই হয়, ইয়েস! আমি একজন সহী মুসলিম নাস্তিক, ইসলামবিদ্বেষী, খারাপ মুসলিম, কোন সমস্যা?
শুভ্রনীল বহ্মচারী
সাম্প্রতিক মন্তব্য